আরমান হোসেন ডলার, (বিশেষ প্রতিনিধি) বগুড়াঃ
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপর অনুষ্ঠিত হবে কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচ। সেখানে অংশগ্রহণ করবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুইটা দল আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল।
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল বিশ্বের একটি বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে বিশ্বকাপ ছাড়া অন্যান্য টুর্নামেন্ট বিবেচনায় নিলে পরিসংখ্যান আর্জেন্টিনার পক্ষেই কথা বলে। কোপা আমেরিকায় তো আকাশি-সাদারা ঢের এগিয়ে।
আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মধ্যে ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়, উভয় দেশে খেলাটি জনপ্রিয় হওয়ার আগেই। দেশ দুইটির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায় সব ধরনের ক্রীড়াতেই লক্ষ করা যায়, তবে পুরুষ ফুটবলে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটু বেশিই। খেলায় কোন দলই পরাজয় বরণ করতে চায়না, এমনকি কখনো কখনো যদি এদের মধ্যকার খেলাটি কোন চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হয় তবে ওই চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় এই দুই দলের খেলাটিই বেশি গুরুত্ব লাভ করে।
আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল প্রথম মুখোমুখি হয় ১৯১৪ সালে। সিবিএফ ও এএফএ এ হিসেব কিছুটা ভিন্ন হয়। তবে ফিফার হিসেব অনুযায়ী এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দল দুইটি ১৭০ টি খেলায় অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রদর্শনী খেলা, বিশ্বকাপের খেলা এবং অন্যান্য দাপ্তরিক প্রতিযোগিতা (যুব দলের খেলা ছাড়া)।
এই ১৭০টি খেলার মধ্যে ৭০ টিতে জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা, ৪০টিতে জয় পেয়েছে ব্রাজিল এবং বাকি ৩০ টি খেলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। মোট গোলের ১৯২টি করেছে আর্জেন্টিনা এবং ১৬৩টি করেছে ব্রাজিল।
তবে শুধু বিশ্বকাপের খেলা হিসাব করলে তাতে ব্রাজিল ২টি জয় নিয়ে এগিয়ে আছে, একটি খেলা হয়েছে ড্র এবং অন্যটি জিতেছে আর্জেন্টিনা।
অন্যদিকে, কোপা আমেরিকায় বেশি জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তারা জিতেছে ১৪টি খেলায়, ৮টি খেলা ড্র হয়েছে এবং ৯টি জিতেছে ব্রাজিল।
দল দুইটির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫০টি প্রদর্শনী খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জিতেছে ব্রাজিল, ১৯টি জিতেছে আর্জেন্টিনা এবং ড্র হয়েছে ১৪টি।
১৯৭০ এর দশকে কিছুটা খারাপ সময় কাটায় আর্জেন্টিনা। সেসময় তারা ১২টি খেলার মধ্যে মাত্র একটিতে জয় লাভ করে, ৭টিতে পরাজিত হয় এবং ৪টি খেলা ড্র হয়।
দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা, তারা ৬-১ গোলের ব্যবধানে ব্রাজিলকে পরাজিত করে (বুয়েনোস আইরেস, ১৯৪০)। এছাড়া, তারা ১-৫ গোলের ব্যবধানেও জয় পেয়েছে (রিউ দি জানেইরু, ১৯৩৯)। ব্রাজিলের বড় জয়গুলো হল ৬-২ গোলের ব্যবধানে (রিউ দি জানেইরু, ১৯৪৫ ও ১৯৬০) এবং ১-৪ গোলের ব্যবধানে (বুয়েনোস আইরেস, ১৯৬০)।
আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মধ্যে সর্বশেষ মহাদেশীয় খেলা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই। ভেনিজুয়েলার মারাকাইবো শহরের এস্তাদিও হোসে পাচেঞ্চো রোমেরোতে। খেলাটি ছিল ২০০৭ কোপা আমেরিকার ফাইনাল। খেলায় ব্রাজিল ৩-০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোলটি করেছিলেন হুলিও বাপতিস্তা, দ্বিতীয় গোলটি ছিল রোবের্তো আয়ালার আত্মঘাতী গোল এবং তৃতীয় গোলটি করেন দানি আলভেস।
১৪_বছর_পর_কোপার_ফাইনালে_সুপার_ক্ল্যাসিকো
দীর্ঘ ১৪ বছর পর দর্শকরা আবারও কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের লড়াই দেখবে। সর্বশেষ ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল।
কোপা আমেরিকার সর্বশেষ ২০১৯ আসরে পেরুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। তবে এবার শেষ পর্যন্ত কার ঘরে উঠবে শিরোপা, তা না হয় সময়ই বলে দিবে। তবে রোমাঞ্চে ঠাসা ধ্রুপদী এক লড়াই দেখার অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব।
শেষবার ২০০৭ সালে কোপার ফাইনালের মঞ্চে ব্রাজিলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। সে ম্যাচে অবশ্য কোনো সুখস্মৃতি নেই আর্জেন্টিনার।
রিকেয়লেম-মেসির আর্জেন্টিনা হেরেছিল ৩-০ ব্যবধানে। কোপা আমেরিকায় সর্বশেষ ২০১৯ সালে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। সেবার ব্রাজিলের কাছেই হেরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
সম্প্রতি কোপা আমেরিকায় সুপার ক্ল্যাসিকোতেও আর্জেন্টিনার কোনো সুখস্মৃতি নেই। আর্জেন্টিনার সর্বশেষ জয় ১৯৯১ সালে, সেবার ডিয়েগো ম্যারাডোনার জাদুতে ৩-২ গোলে জয় পেয়েছিল।
১৯৯১ আসরের পর দক্ষিণ আমেরিকার মঞ্চে ছয়বার হয়েছিল সুপার ক্ল্যাসিকো। একটিতেও জয় তুলে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। এবার সেই শিরোপা খরা ঘোচাতে হলে করতে হবে রেকর্ড, ৩০ বছর জয়হীন থাকার রেকর্ড ভেঙেই জিততে হবে কোপা আমেরিকা।
Leave a Reply