আবুল হোসেন বাবুল, কুড়িগ্রাম থেকেঃ
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের হলোখানায় জমিজমার বিরোধ নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষে ১১ জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি। এলাকায় টান টান উত্তেজনা। যে কোন সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে থানা পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মহৎদের সমন্বয়ে গঠিত শালিস বৈঠক পন্ড, ৯ সদস্যের জুরি বোর্ড সিদ্ধান্ত দেওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে একটি পক্ষ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রতিপক্ষের উপর সন্ত্রাসী হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালানো হয়েছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন গিয়ে এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ভেরভেরী মৌজার সরকার পাড়ার মৃত গোলাপ উদ্দিনের পুত্র আবেদ আলী গং-এর সাথে মৃত গবরা মুন্সীর পুত্র জলিল, খলিল ও আজিজুল গং-এর জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এস.আই জলিল, হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান উমর ফারুক ও স্থানীয় মহৎ ব্যক্তিরা আবেদ, জলিল ও মৃত কাচুয়া মামুদের পুত্র সাইফুলের মধ্যে বিবাদমান জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ মিমাংসার লক্ষে উভয় পক্ষের জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়। গ্রামবাসী বিরোধ মিমাংসার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। সে লক্ষ্যে আবেদ গং-এর পক্ষে আপেল ও হামিদ মেম্বার, জলিল গং-এর পক্ষে মনছুর আলী ও নরেশ এবং সাইফুলের পক্ষে বাতেন ও মকবুল, ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে নূরুজ্জামান, রফিকুল মেম্বার ও নূর মোহাম্মদ আমিন সহ ৯ সদস্যের জুরিবোর্ড গঠন করা হয়। জুরিবোর্ডের সদস্যরা উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা সাপেক্ষে ও উকিলের মতামতের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা থাকলেও রায় ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগেই দুপুর আনুমানিক ১২ ঘটিকায় জলিল গং-এর লোকজন বিবাদমান জমিতে গাছ লাগানো শুরু করে।
আবেদ গং-এর মহিলারা জানায়, জলিল গং-এর লোকজন লাঠি, ছোড়া, দা, কুড়াল নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। এতে নজরুল (৫০), আতিকুল (২৩), মজিদুল (২৮), হুজুর আলী (৫০), রাজ্জাক (২৪), ফয়জুদ্দিন (৬০), আরমান (২৬), তাহেরা (৪০), শহিদুল (৩০) ও রাবেয়া বেগম আহত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আহতদের মধ্যে নজরুলের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় রংপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানায় বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ মিমাংসার জন্য এস.আই জলিল ও ইউপি চেয়ারম্যান উমর আলীর আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না। তারা মনে করেন একটি পক্ষের একজন মাতবরের কারণে তীরে এসে তরী ডুবল, ভেস্তে গেল একদল সমাধানকারীর অক্লান্ত পরিশ্রমের উদ্যোগ।
জলিল গং-এর লোকজন সাংবাদিকদের জানান, আবেদ গং-এর কোন জমি নাই। তারা আমাদের জমি দখলে রেখেছে। আবেদ গং-এর হামলায় জলিল আহত হয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। জুরিবোর্ডের সদস্য নুরুজ্জামান বলেন সন্ধ্যায় আমাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা, কিন্তু কেন জানিনা তার আগেই এমন মারামারীর ঘটনা ঘটল। হামিদ মেম্বার বলেন আমরা সমাধানের চুড়ান্ত পর্যায় এসেছিলাম, কি থেকে যে কি হয়ে গেল। জুরিবোর্ড সদস্য মনছুর আলীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কুড়িগ্রামে ব্যস্ত থাকায় মতামত জানা সম্ভব হয়নি। হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান উমর ফারুক জানান আমরা উভয় পক্ষের উকিল নিয়ে সকল পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করেছি এবং সন্ধ্যায় আমরা রায় জানানোর কথা ছিল।
Leave a Reply