কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি সামান্য কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি।
পানি বৃদ্ধির কারণে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়ায় বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। প্রথম দফায় ১২দিন এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা বন্যায় টানা এক সপ্তাহ ধরে প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছে জেলার ৩ লাখ মানুষ। প্রায় ৫০ হাজার বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১০ হাজার একর ফসলি ক্ষেত, ৩৭ কিলোমিটার সড়কপথ এবং সাড়ে ৩১ কিলোমিটার বাঁধ । প্রায় ২২ হাজার নলকুপ ডুবে গেছে। ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ১৩৯টি বিদ্যালয়। জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার স্বাক্ষরিত ডাটা বিশ্লেষন করে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রিতরা রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে। এছাড়া রয়েছে পয়:নিস্কাশন সমস্যা। আছে শিশু ও কিশোরীদের নিরাপত্তা সমস্যা। সরকারিভাবে বরাদ্দ ত্রাণ অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বানভাসীরা। এখনো অনেকে ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তার ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠেছে। বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরকম বাস্তবতায় জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, মাঠ পর্যায়ের চাহিদা মাফিক পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। ঈদের আগে ৪লাখের বেশী মানুষকে ১০কেজি করে ভিজিএফ এর চাল দেয়া হবে। এক কথায় ত্রাণের কোন সংকট নেই। তবে এ কথা সত্য পানিবন্দি সব মানুষের ত্রাণ প্রয়োজন নেই। যারা অবস্থাসম্পন্ন তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। কেউ যেন খাদ্য কষ্টে না পড়ে তার জন্য সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, বন্যাকালিন মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। জেলার ১১থানার অফিসার ইনচার্জদের দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। এছাড়া রয়েছে মোবাইল টহল টিম। কোন ধরনের বে-আইনি কর্মকান্ড বরদাস্ত করা হবে না। মোবাইলে অভিযোগ পেলেও নেয়া হয় তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা। সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার বায়েজিদ(৮), মুন্নি (১৮মাস) ও গ্রাম পুলিশ সদস্য সুরুজ্জামান (৪৫) নামে তিন জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। চলতি দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ নিয়ে ৬জনের মৃত্যু হল। এরমধ্যে শিশু ৪জন। এছাড়া প্রথম দফার বন্যায় পানিতে ডুবে আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ হিসাবে চলতি বছর বন্যায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৬জনে। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় বানভাসিদের নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে সঙ্গত কারনেই কাজ করছে ৮৫টি মেডিকেল টিম ।পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্গম অঞ্চলগুলোর দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
Leave a Reply