বাল্যবিয়ে ঠেকানো আত্মপ্রত্যয়ী রিয়ার গল্প
এ এস খোকন, ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকেরছড়া গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য রিয়া মনি আক্তার রূপা। মা ববিতা বেগম গৃহিনী। বাবা রিয়াজুল ইসলাম ছিলেন দিনমজুর। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো তাকে। পরিবারের স্বাভাবিক খরচ জোগাতেই দিন ফুরিয়ে যেত তার। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অনেকটা দায়মুক্তি চেয়েছিলেন হয়তো তিনি। যৌতুকের জন্য সামান্য জমিটুকু বন্ধক রাখতে চেয়েছিলেন।
রিয়া সে সময় নবম শ্রেণিতে পড়তেন। অথচ বিয়েটা ঠিক হয়ে যায়। ওই সময় বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটি সন্ধান পান তিনি। বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে মহিদেব যুব সমাজ কল্যান সমিতির সিএনবি প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন রিয়া। পরিবারের সম্মতি ছিল না রিয়ার এই প্রকল্পে যোগ দেয়া। ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা সহ রিয়া মনির তার বাবাকে বুঝিয়ে বিয়ে ঠেকিয়ে দেন। শুধু তাই নয় বাবা জমি বন্ধক রেখে বিয়ে না দিয়ে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে বাড়ীতে হাঁস-মুরগীর খামার করার পরামর্শ দেন। সে লক্ষে ছোট একটি খামার করে দেন রিয়ার বাবা। সে খামারের আয় থেকেই এখন রিয়ার পড়ালেখার খরচ চলছে। শুধু তাই নয় সেলাই প্রশিক্ষন নিয়ে রিয়া এখন টেইলরিং করে পরিবারকেও সহযোগিতা করছে ।
পরবর্তীতে সে নিজ উদ্যোগে মহিদেব যুব কল্যান সমিতির হয়ে মেয়েদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। রিয়া বেশি গুরত্ব দেন ১৫-৩৫ বছরের মেয়েদের প্রতি। কারণ সমাজে এই বয়েসের মেয়েরাই বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। তাই তাদেরকে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ শুরু করেন। মহিদেব সিএনবি প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়মিত উঠান বৈঠক আয়োজনের মধ্য দিয়ে কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস দূরীকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংস্থার সহযোগিতায় আশপাশের কয়েটি বাল্য বিয়ে ঠেকিয়েছেন। রিয়া এখন নানা বাড়ীতে নানীর সাথে বসবাস করে।
এ বিষয়ে আত্মপ্রত্যয়ী রিয়া বলেন, এখন আর সেই কথা মনে করতে চাই না। তখন বিয়ে হয়ে গেলে অবশ্য জীবনের গল্প ভিন্ন হতো। শুধু এটুকু বলব মহিদেব যুব কল্যান সমিতির সিএনবি প্রকল্প আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। ভবিষ্যতে আমি পুলিশ অফিসার হয়ে দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
রিয়া অবশ্য একটা যুদ্ধ জয় করেই থেমে থাকেননি। এখনো প্রতিটি মুহূর্তেই তাকে যুদ্ধ করতে হয়। তীর ছোড়ার আগে লক্ষ্যস্থির করতে হয়। চারপাশটাকে ভুলে মনোযোগ স্থির করার লড়াইয়ে জয়ী হতে হয়। তার এই যুদ্ধ জয়ের গল্প হাজারো কিশোরীর জীবন বদলে দিতে পারে। প্রেরণা দিতে পারে নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার। সাহস জোগাতে পারে অসম্ভবকে সম্ভব করার।
রিয়ার নানী আছিয়া বেগম জানান, মহিদেব যুব সমাজ কল্যান সমিতির সিএনবি প্রকল্পের সহায়তায় আমার নাতী অনেক উপকার পেয়েছে। এজন্য মহিদেব সমিতিকে ধন্যবাদ।
মহিদেব যুব সমাজ কল্যান সমিতির সিএনবি প্রকল্পের ফিল্ড ফ্যাসিলেটেটর আব্দুল লতিফ জানান, ঝড়ে পড়ে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের বিভিন্ন ট্রেড্রে প্রশিক্ষন দিয়ে নিজেরা আয় বৃদ্ধি করে নিজের পড়াশুনা চালাবে এবং বাল্যবিয়ে রোধ করে কাঙ্খিত স্থানে পৌছাতে পারবে এ লক্ষেই আমরা কাজ করছি।
Leave a Reply