ভুরুঙ্গামারীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ
ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ ২০১২ সালে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো এমপিওভুক্ত শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারেন না। নিজে কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতেও পারেন না। সরকারি এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নে চলছে কোচিং বাণিজ্য। পুরানো কৌশল পরিবর্তন করে শিক্ষকরা নতুনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই শিক্ষা বাণিজ্য। এর মধ্যে উপজেলার সরকারি স্কুল ও এমপিওভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাসা ভাড়া নিয়ে নামে বেনামে চালাচ্ছেন এ কোচিং বাণিজ্য। আর সেখানেই সকাল, দুপুর ও বিকালে চলছে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদান। এমনিও একটি অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার অভিভাবক ও প্রাত্তন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নে রয়েছে ৩টি কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে আন্ধারীঝাড় নছর উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সামনে বাসা ভাড়া নিয়ে নিউরন শিক্ষা একাডেমি ও আন্ধারীঝাড় আলহাজ মাহমুদ আলী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আন্ধারীঝাড় কিন্ডারগার্টেন সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন তাদের বাণিজ্য কেন্দ্র।
এছাড়াও আন্ধারীঝাড় আলহাজ মাহমুদ আলী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল নিউরন শিক্ষা একাডেমির পরিচালক ও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আইয়ুব আলী ও মোজাদুল ইসলাম প্রামানিক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলে জানা গেছে।
আরো রয়েছে আন্ধারীঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনায়েত উল্যাহ কোচিং পড়াচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আর নিউ আইডিয়াল কোচিং সেন্টারে চলছে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের কোনো না কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ঘরে ঘিঞ্চি পরিসরে ১ ঘণ্টার কোচিংয়ে ২০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পড়ানো হচ্ছে। এতে দায়সারা গোছের পাঠদান হলেও মূলত শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই।
এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কোচিং ফি বাবদ মাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে।
কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘কি করবো, কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষায় পাস করবো কিভাবে? ক্লাসেতো আর সব কিছু শেখানো হয় না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘ক্লাসে তো আর সব পড়ানো হয় না। বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের কোচিংয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না।’
স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীদের সঠিক ভাবে পাঠদান করা হলে কোচিংয়ের কোনো প্রয়োজন হয় না। কোচিং বাণিজ্যের কারনে শিক্ষা ব্যয় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কোচিং ব্যবস্থা আমাদের জন্য এখন মহামারী ও ঘাতক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, কোচিংবাজ শিক্ষকরা এতটাই বেপোরোয়া যে কোনো ভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। এখনে প্রতিমাসে মোটা অংকের একটা অর্থ আসায় একটি অসাধু মহল জড়িয়ে পড়েছে। কাজেই বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
আন্ধারীঝারে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসাধু ও বেপরোয়া শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি শিক্ষার্থী-অভিভাবক। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শ্রেণীকক্ষের আদলে কোচিং সেন্টারগুলোতেই চলছে পাঠদান। শ্রেণীকক্ষ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী শুন্য।
আলহাজ মাহমুদ আলী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল আউয়ালের নাম পরিচালক হিসেবে নিউরন শিক্ষা একাডেমির কোচিং সেন্টারের চলতি বছরের রুটিনে দেখা গেলেও এবং তিনি স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকলেও কোচিং এ জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুরোধে উচ্চতর গনিতের ক্লাশ নিয়েছিলাম এখন আর নিচ্ছি না।
অপর শিক্ষক মোজাদুল ইসলাম প্রামানিক ও আন্ধারীঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনায়েত উল্যাহ জানান, আন্ধারীঝাড় কিন্ডারগার্টেনে প্রাইমারীস্কুলের বাচ্চাদের পড়াতেন কিন্তু এখন আর পড়ান না।
কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে অনেকেই বলেন, ‘আমাদের অজান্তে কিছু কিছু শিক্ষক তাদের বাসা বাড়িতে গোপনে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, অভিভাবক ও প্রাত্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেয়া হয়েছে। সরজমিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চিঠির জবাব পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply