1. nahidbd6969@gmail.com : kurigrampratidin :
  2. 123@kurigrampratidin.com : itsme :
ভূরুঙ্গামারীতে কালজানী ও দুধকুমারে বিলীন বিস্তীর্ণ জনপদ - কুড়িগ্রাম প্রতিদিন
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন

ভূরুঙ্গামারীতে কালজানী ও দুধকুমারে বিলীন বিস্তীর্ণ জনপদ

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০
  • ৪১ Time View

নাহিদ হাসান (নিবিড়),কুড়িগ্রাম প্রতিদিনঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বর্ষার শুরুতেই কালজানি ও দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে বসতভিটা, বাঁশঝাড়, গাছবাগান ও আবাদীজমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরছে হাজার হাজার মানুষ। হুমকিতে রয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, কয়েকটি বিজিবি ক্যাম্পসহ সহ আরো বেশ কিছু সরকারি স্থাপনা।

গত বৃহস্পতিবার সরে জমিনে উপজেলার শিলখুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কালজানি নদীর ভারতীয় অংশে নির্মিত সুরক্ষা বাঁধে ধাক্কা খেয়ে তীব্র বেগে ছুটে আসা নদীর পানি আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশের ভূখন্ডে । ফলে শিলখুড়ি ইউনিয়নের সর্ব উত্তরে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন ৪টি ওয়ার্ডে (৫টি গ্রাম) তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন পাল্টে যাচ্ছে এখানকার মানচিত্র। স্থানীয়ভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে স্রোতের তীব্রতা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে কোথাও কোথাও। কিন্তু গ্রামবাসীর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বিরামহীনভাবে ভাঙ্গছে নদীর দুই তীর।

কালজানি নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন শিলখুড়ি ইউনিয়নের এই ৫ টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ (সাড়ে ছয় হাজার খানা) বাস করে। নদী ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মানের দাবী অনেক পুরোনো হলেও এলাকার মানুষের অভিযোগ, তাদের আকুতি আমলে নেয় নি কেউই।

ভাঙ্গনের শিকার এলাকার নাজিম উদ্দিন,আব্দুল খালেক ও,আব্দুস ছালাম জানান, দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় বাঁশের যে বেড়াটি দেয়া হয়েছিল সেটি ইতোমধ্যে ভেঙ্গে গেছে , এবারের বর্ষায় কি হবে আল্লাহই ভালো জানেন । তিনি বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা গেলে এলাকার দুটি বিজিবি ক্যাম্প, দুটি প্রাইমারী স্কুল, একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা সহ বহু স্থাপনা অচিরেই হুমকির মুখে পরবে।

শুধু নদীর ওপার নয়, নদীর এপারেও ভাঙ্গনের তীব্রতা সমান। বড় বড় চাপ ধরে পাকারাস্তা, ঘাট, ঘাটসংলগ্ন বাজার, বসতভিটা, গাছবাগান, বাঁশঝাড় আর আবাদি জমি অনবরত ভেঙ্গেই চলছে। এপারেও হুমকিতে পরেছে বিজিবি ক্যাম্প, মডেল প্রাইমারী স্কুল এবং জনবসতিসহ বিস্তীর্ন এলাকা।

এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ মিজানুর রহমান, হাজী আ: রশীদ ও আব্দুল হালিম জানান দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো এলাকাই হয়তো হারিয়ে যাবে নদীগর্ভে। সামনেই হয়ত ভেঙ্গে যাবে শিলখুড়ি ইউনিয়ন সদরের বাজারটিও। শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ইউসুফ আক্ষেপের সুরে বলেন : ভাঙ্গনের কবলে পতিত মানুষের কি জ্বালা তা কাউকে বোঝানো যায়না। সহ্য করা যায়না ওদের কষ্ট। কালজানি নদীর দুই পারে দুটি বাঁধের দাবী বহুদিনের। বহুবার তিনি উপজেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেছেন এবং সর্বশেষ ৩ জুন ২০২০ইং তারিখে একটি আবেদনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় দক্ষিন ধলডাঙ্গার কালজানি নদীর ঘাটপাড় ভাঙ্গন প্রতিরোধ কল্পে একটি প্রস্তাব পেশ করে তা গ্রহনের জন্য সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

অপরদিকে দুধকুমার নদীর ভাঙ্গনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নলেয়া, চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা, পাইকডাঙ্গা,সোনাহাট ব্রীজের পশ্চিমপাড়, বলদিয়া ইউনিয়নের হেলডাঙ্গা ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি সহ বিভিন্ন এলাকার শত শত বিঘা আবাদী জমি ও বসতভিটা ক্রমশ নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে । কয়েকদিনের ভাঙ্গনে নদীগর্ভে চলে গেছে ইসলামপুরের একটি মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ ও শতাধিক ঘরবাড়ী। হুমকির মুখে পরেছে দক্ষিন চরভূরুঙ্গামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইসলামপুর থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদরগামী একমাত্র পাকারাস্তাটি। বসতভিটা হারিয়ে ইসলামপুর গ্রামের খোদেজা বেগম ও নুরজাহান খাতুন গালে হাত দিয়ে বসে ছিলেন নদীর পাড়ে। প্রতিবেদককে দেখে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন তারা। ”হামার সউক গেইছে বাহে। নদী হামাক ফকির বানে দিলো।”

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), আলোকিত ভূরুঙ্গামারী ও দুধকুমার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহানারা বেগম মীরা বলেন, ”আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রনয়ন করেছেন। তাদের নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন”।

চরভূরুঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম ফজলুল হক বলেন, ইতিপুর্বে নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আবার ভাঙ্গছে। আবারও কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এবার দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করছি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোডের্র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের্র সমন্বিত পরিদর্শন শেষে নদী শাসনের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত দুইপারের জনগনের পারাপারের সুবিধার্থে ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও কালজানি ও দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন রোধে ”দুধকুমার নদী উন্নয়ন প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প তৈরীর কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।

এ বিষযে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরুজুল ইসলাম বলেন ”নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই একটি সমাধান দৃশ্যমান হবে”।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

প্রকাশনা

সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি : মোঃ এনামুল হক

উপদেষ্টা সম্পাদক: মোঃ মোজাহার হোসেন

প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ নাহিদুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক: সি. আই মামুন

নির্বাহী সম্পাদক:

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক:

© All rights reserved © 2024 কুড়িগ্রাম প্রতিদিন
Theme Customized By BreakingNews