রফিকুল হাসান রনজু, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলার শস্য ভান্ডার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বাম্পার ফলন হওয়া দিগন্তজোড়া ইরি-বোরো ধান তলিয়ে গেছে আম্ফানের আস্ফালনে। মাঠে মাঠে পাকা ধানের সোনালী শীষে দোল খাচ্ছিল কৃষকের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে।ফলে কৃষক কাটতে পারছে না, গোলা হয়ে পরছে ধানহীন,দুঃস্বপ্ন হয়ে ধেয়ে আসছে ক্ষুধার জ্বালা।
প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড আম্ফান এর প্রভাবে গত বুধবার থেকে ভূরুঙ্গামারীতে দমকা হাওয়া সহ ঝড় বৃষ্টি ও ভারি বর্ষণ শুরু হয়। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গোটা উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে পানি ডুবে যায় এবং খাল,বিল, ডোবা,জলাশয় পানিতে থই থই হয়ে যায়। ফলে উপজেলার কয়েক হাজার একর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে সেই পানিতে। ধানের সঙ্গে তলিয়ে গেছে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন। বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ১৫ হাজার ৬৫৯ হেক্টর । বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৬৬ হাজার ১২০ মেঃটন। ফলে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেছিল উপজেলা কৃষি বিভাগ কিন্তু সে আশায় বাঁধ সেধেছে গত সাত দিনের টানা বৃষ্টি। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বাকিটা পানির নীচে।
তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান কেটে বাড়ি আনতে কৃষকের পরিশ্রম এবং খরচ হচ্ছে কয়েক গুন বেশি । এক সপ্তাহে ভূরুঙ্গামারীর আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি যার ফলে ভেজা ধান ঘরে তোলা ও মাড়াই করে শুকাতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কষ্টে উৎপাদিত শত শত মন ধান।
উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের খাটামারী গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান, নলেয়া গ্রামের কৃষক শহিদুল, আসামপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার ও চর ভূরুঙ্গামারীর কৃষক আমিনুর জানান, জমিতে সম্পূর্ণ ধান পেকেছে । ভেবে ছিলাম প্রথম দিনের বৃষ্টি শেষ হলেই ধান কাটবো কিন্তু গত সাত দিনেও বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান গাছ শীষের নীচের দিক থেকে পঁচে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। গত বুধবার আড়াই বিঘা জমির ধান কেটে পালা দিয়ে রেখেছেন পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আলিম উদ্দিন। কিন্তু বৃষ্টি থাকায় ধান গুলো মাড়াই করতে পারেননি। সে ধানের আটি গুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম । উপজেলার দশটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, উপজেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। প্রাকৃতিক সমস্যায় আমাদের কারও কিছুই করার নেই। বৃষ্টিতে যে সমস্ত বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো কাটতে হবে।
Leave a Reply