লিয়াকত, রাজশাহী ব্যুরোঃ
রাজশাহী পোস্ট অফিস পরিদর্শক প্রশাসন মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ সুত্রে, পাওয়া যায় মজিবুর রহমান নাটোর প্রধান ডাকঘরে হিসাব রক্ষক হিসেবে থাকা কালীন সময়ে সরকার ঘোষিত স্কেল অনুমোদনের নাম করে কর্মচারীদের নিকট হতে বিলের অর্ধেক টাকা নিয়েছেন। সেই সাথে অফিসিয়াল বিভিন্ন অবৈধ বিল তৈরী করে দুর্নীতি করেছেন। তিনি যেখানেই চাকরী করেন সেখানেই এই ধরনের কাজ করেন বলে জানান গেছে।
মজিবুরের নামে রাজশাহী ডেপুটি পোস্ট মাস্টার ও পি.এম.জি বরাবরে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। তাঁরা অভিযোগটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সহকারী পরিদর্শক পদোন্নতি পরীক্ষায় এক লক্ষ টাকা নিয়ে তিনি পদোন্নতি দিয়েছেন। আরো উল্লেখ করা হয় নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে তিনি অপরিসিম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাত করেছেন।
পোস্টম্যান সেলিম রেজা এক বছরের অধিক সময় ধরে মুক্তারপুর শাখা ডাকঘরে পোস্ট মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিত্বে পদোন্নতির জন্য চারঘাট-বাঘা আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে আবেদন করলেও তা আমলে না নিয়ে ঘুষের তামাসা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তারপুর শাখা ডাকঘরের নিয়োগ পরীক্ষার দিন ধার্য্য করা হয়। সেখানেও মজিবুর রহমান ঘুষ নিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে। তিনি এই চাকরী সুবাদে তিনি জমি ক্রয়সহ ব্যাংকে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে জানা যায়।
এদিকে দূর্গাপুর উপজেলার দাউকান্দি শাখা ডাকঘরের ই.ডি.এ পদে লোক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অন্যান্য প্রার্থীর ন্যায় ইন্তাজ আলী নামে একজন আবেদন করেন। তিনি আবেদনের সাথে পুঠিয়া দূর্গাপুরের সংসদ সদস্যর ডিও লেটার সংযুক্ত করেন এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেন। কিন্তু এই মজিবুর তাঁর এবং অন্যান্যদের অধিকার খর্ব করে ঘুষের টাকার বিনিমিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেন। এ নিয়ে রাজশাহী জর্জ কোর্টের সিনিয়র এ্যাডভোকেট এজাজুল হক মানু মারফত মজিবুরের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়। সেখানে তিনি যে উত্তর দেন তা সন্তোষজনক নয়।
জানা গেছে ঐ পরীক্ষায় ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পরীক্ষার পূর্বেই তার মনোনীত প্রার্থীর হাতে সরবরাহ করে পরীক্ষা গ্রহন করা হয়। সেইসাথে পছন্দের প্রার্থীকে কাগজে কলমে ১ম দেখিয়ে পূর্বের তারিখ দিয়ে তাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
এদিকে নাটোর, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার কর্মচারীদের পক্ষ থেকে নওগাঁর অপারেটর মামুনুর রশিদ, নাটোরের অপারেটর রজব আলী সরকার ও মজিবর রহমান এবং রাজশাহীর অপারেটর আসাদুজ্জামান, মজিবুর রহমানের দুর্নীতি নিয়ে উত্তরাঞ্চল রাজশাহীর পোস্টমাস্টার জেনারেল রিয়াজুল ইসলাম সহ দুদক, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেন ইউনিয়নের সাথে জড়িত হয়ে তিনি কর্মচারীদের উপকার না করে তাদের নিকট থেকে মাসহারা নিচ্ছেন। এছাড়াও ডি.পি.এম.জি অফিস রাজশাহীর বাৎসরিক বাজেটের টাকা কাল্পনিক বিল ভাউচারের মাধমে খরচ দেখিয়ে আত্মসাত করছেন। কর্মচারীদের অযাচিত দোষত্রুটি ধরে টাকা নেন। সেইসাথে আনিত অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য অভিযোগকারীদের প্রশাসনিক চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন।
শুধু অর্থ নয় মজিবর রহমান পোষ্ট অফিস পরিদর্শক প্রশাসন রাজশাহী বিভাগ রাজশাহী প্রশাসনিক পদে থাকার প্রভাবে বীরকয়া পোষ্ট অফিসের ইডিসেলিনা খাতুনকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেলিনা রাজী না হওয়ায় রাগে তার ছেলে ইডিডিএ কে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। যা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে প্রভাব খাটিয়ে তাদের ভয়ভীতী দেখানো হয়। যাহা পরবর্তী পর্যায়ে ডিপিএমজি ও পিএমজি বরাবর আবেদন করা হয়।
পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ইডিডি একে স্বপদে বহাল করা হয়। ইডিডিএ প্রায় ৯ মাসের বেতন হতে বঞ্চিত। সহকারী পোষ্ট অফিস পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম স্বপদে বর্তমানে নাটোর পদোন্নতির জন্য মজিবর রহমানকে নগদ ১লক্ষ ও একটি ডিসকোভার মোটরসাইকেল দিয়ে পদোন্নতি নেন। যাহা ক্রয়ের স্থান তাহেরপুর শোরুম। কারন সহকারী পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের বাড়ী তাহেরপুর হওয়ায় সেখান থেকেই তিনি মোটর সাইকেলটি কিনে দেন বলে জানান আমিনুল।
এবিষয়ে, মজিবুর রহমান এর নিকট মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন।
Leave a Reply