স্টাফ রিপোর্টারঃ
সিলেটের এমসি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের ভিডিও ও ছবি ধারণ করে তাকে ব্ল্যাকমেইলও করা হয়। এরপর একাধিকবার তাকে ইন্টারনেটে ছবি ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ১০ জানুয়ারি সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ওই কলেজছাত্রী এ অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের কাঠগড়ায় সিলেটের চৌকিদেখি এলাকার কণ্ঠশিল্পী এফকে ফয়সল।
সর্ব ১ম ২০১৮ সালে ফয়সলের এক বন্ধুর বাসায় ধর্ষণের শিকার হন ওই কলেজছাত্রী। ওইদিনের ছবি এবং ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে রাখার পর তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ওই ছাত্রীকে ধর্ষণও করে ফয়সল। দীর্ঘ সময়ের এ ঘটনায় ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় ফয়সল তাকে বিয়ে করার আশ্বাসও দেন।
কিন্তু পরবর্তীতে ফয়সল বিয়ে না করে তার সহযোগীদের নিয়ে তাকে উল্টো নানাভাবে হয়রানিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনার পর এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়েরও করেছিলেন ওই ছাত্রী। তবে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত না করে উল্টো তাকে টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে ওই ছাত্রী বলেন,এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি নিরাপত্তাহীনতায়ও রয়েছে। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সুবিচার পেতে তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনাও করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- একদিন কলেজে যাওয়ার পথে পুজোর দাওয়াতে মিথ্যা কথা বলে ফয়সল তার বন্ধু সজল দেবনাথের বাসায় নিয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে এবং নিজের মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে। এ বিষয়ে মুখ খুললে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এরপর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করে বিগত ২ বছর আমাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে।’
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন- ‘দীর্ঘ সময়ের এ ঘটনায় আমি এক সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় বিষয়টি বাসায় জানিয়ে দিবো বললে আসামি আমাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেয়। এর জের গত বছরের ২৭শে অক্টোবর ফয়সলের বোন বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে চান বলে তাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। তখন তার মা-বোনদের উপস্থিতিতে দরজা বন্ধ করে ফের ধর্ষণ করে। এরপর তার বোন রুমি বেগম এবং তার বন্ধু কামরান, সুরাব, রাসেল প্রমুখ তাকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করে। তখন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মাকে ফোন দিলে পুলিশের সহায়তায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।’
এছাড়াও লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে বিষয়টি পারিবারিকভাবে শেষ করবে বলে ফয়সলের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে বলা হয়। এ সময় তার (কলেজছাত্রী) মা আমার সম্মানের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে তাদের চাওয়া তিনদিন সময় দিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে চলে আসেন। পরে তারা ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি ভুলে যেতে তাকে হুমকি দেয়।
এরপরই নিরুপায় হয়ে গত বছরের ৩রা নভেম্বর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। ওইদিনই মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করানো হয়। তবে মামলার পরদিনই এয়ারপোর্ট থানার এস আই পলাশ চন্দ্র মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিতে তাকে নির্দেশ দেন। এরপর থেকে দুই মাস অতিবাহিত হলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
তিনি বলেন, মামলায় নতুন দায়িত্ব পাওয়া তদন্ত কর্মকর্তা এস আই রিপনও মনগড়া কথা বলে টাকা নিয়ে মামলা তুলে নেয়ার কথা জানান। এখন নিজেদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আসামিকে দেশের বাইরে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বলেও অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। পাশাপাশি আসামির পরিবারের হুমকি-ধামকির কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এমনকি ভয়ে তিনি বাসা বদল করে অন্য পাড়ায়ও চলে গেছেন। তিনি পুলিশের আচরণেও ক্ষুব্ধ।
সর্বশেষে তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply