নাহিদ হাসান নিবিড়: প্রযুক্তি আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। তবে সেই সাথে ডেকে এনেছে অসুস্থতাও। আমাদের দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময় কাটে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে। অফিসে থাকলে কম্পিউটার স্ক্রিনের মাঝে কাটাতে হয় লম্বা একটা সময়। এরপরে মোবাইলের ব্যবহার তো আছেই। এই সকল ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহারকেই বলা হচ্ছে স্ক্রিন টাইম।
প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও বহুল ব্যবহার হাতের মুঠোয় পুরো বিশ্বকে এনে দেওয়ার সাথে নানাবিধ শারীরিক সমস্যাকেও এনে দিচ্ছে। জেনে রাখুন স্ক্রিন টাইমের ফলে যে ক্ষতিগুলো হচ্ছে আপনার অজান্তে।
দিনের সিংহভাগ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে কিংবা মোবাইল হাতে সময় কাটানো স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থার মাঝে পরে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় একই স্থানে শুয়ে-বসে কাটানোর ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অন্তত ২৭ শতাংশ পর্যন্ত।। ২০১১ সালের আমেরিকান একটি গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি’ শীর্ষক জার্নালে। যেখানে বলা হয়- বিনোদনের জন্য যারা দৈনিক চার ঘণ্টা কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় কাটান স্ক্রিনের সামনে, তাদের বড় ধরনের হৃদরোগের প্রভাব দেখা দেয়।
টেক-নেক বলতে বোঝানো হচ্ছে- মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে ৪৫ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে তাকিয়ে থাকার ভঙ্গী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন ভঙ্গীতে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে ঘাড়ের উপর চাপ পরে। এতে করে ঘাড়, কাঁধ ও পিঠ পর্যন্ত ব্যথাভাব দেখা দেয়।
শুধু এটাই নয়। হাতে থাকা মোবাইলের দিকে এভাবে নিচু হয়ে তাকিয়ে থাকার ফলে পুরো মেরুদণ্ডের উপরেই চাপ পরে। ফলে মেরুদণ্ডজনিত সমস্যাও দেখা দেয়।
সময়ের সাথে সাথে মোবাইল ফোনের আকৃতি বড় হচ্ছে। হাতের মুঠোয় মোবাইল দীর্ঘসময় ধরে রাখার ফলে হাতের তালুয় ও আঙুলে ব্যথাভাব তৈরি হয়। এছাড়া মোবাইলে অনবরত টাইপিং করার ফলে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পেশী ক্লান্ত হয়ে পরে। এই সমস্যাকে বলা হচ্ছে টেক্সট থাম্ব। আমাদের হাতের গঠন হাতের চাইতে বড় কোন কিছু দীর্ঘসময় ধরে থাকার মতো করে তৈরি নয়। ফলে মোবাইল ধরে থাকা ও টাইপিং করায় হাতে ব্যথা ও অবশভাব দেখা দেয়।
ক্রিন টাইমের সবচেয়ে বড় ও প্রধান সমস্যাটি হলো আই স্ট্রেইন দেখা দেওয়া। দিনের সিংহভাগ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেই সাথে অক্ষিগোলকের ভেতরের অংশ শুষ্ক হয়ে চোখে জ্বালাপোড়া শুরু করে। এই সমস্যাটিকে বলা হচ্ছে ড্রাই আই সিনড্রম। যা আই স্ট্রেইন থেকেও দেখা দেয়। মোবাইল স্ক্রিন, কম্পিউটার স্ক্রিনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। যা চোখে নিতে পারে না।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিঃসৃত ব্লু লাইট খুব ধীরে ঘুমের সময়কে বদলে দেয়। আকেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্দেশন জানাচ্ছে, বিকাল ও সন্ধ্যার দিকে যতবেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, রাতে ঘুমাতে তত বেশি কষ্ট হয় এবং সময় পিছিয়ে যায়। ঘুমের এই সমস্যার ফলে পুরো দিনের কর্মক্ষমতা ও মুডের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
Leave a Reply