মোঃ আরিফুল ইসলাম, ফটো সাংবাদিক, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ ভুরুঙ্গামারীর দুধকুমার নদীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা গ্রাম। ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ঐ গ্রামের ৩ টি মসজিদসহ কয়েকশ একর আবাদি জমি, গাছ-পালা ও শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙ্গনের তীব্রতায় হুমকির মুখে পরেছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুধকুমার নদী ভাঙ্গনের ফলে বিলীনের পথে পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা নামের একটি গ্রাম। ইতোমধ্যে কাঁচা পাকা শতাধিক বাড়ির সাথে নদীগর্ভে চলে গেছে ৩টি মসজিদ, প্রায় চার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এ ছাড়াও বাঁশঝাড়, ফলের বাগান ও কয়েকশ একর আবাদী জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। হুমকির মুথে পরেছে পাইকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল করিম ১৫শ নামের দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বদলে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। আতংকিত হয়ে পরেছে ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ। বসতভিটা হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটোছুটি করছে মানুষ।। ভাঙ্গনে ভিটেহারা পাইকডাঙ্গা গ্রামের ঘটু শেখ ও আজগর আলী বলেন, পঞ্চাশ বছর আগৎ হামার বসত ভিটা নদীত হারাছিনু বাহে তারপর ফিরি পায়া ফির হারানু, এলা কোটে যাং, কি করং। পাইকডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, নদী যেভাবে ভাংগছে তাতে বিদ্যালয় দুটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পরছে। ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন ব্যবস্থা নাহলে আগামী বর্ষার আগেই পুরো গ্রামসহ বিদ্যালয় দুটিও নদীগর্ভে চলে যাবে। অপরদিকে ভাঙ্গছে কালজানী নদী। বড় বড় চাপ ধরে পাকারাস্তা, ঘাটসংলগ্ন বাজার বসতভিটা, গাছবাগান, বাঁশঝাড় আর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। হুমকিতে আছে বিজিবি ক্যাম্প, মডেল প্রাইমারী স্কুল এবং ঘনজনবসতিসহ বিস্তীর্ন এলাকা। ভাঙ্গনের শিকার অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ মিজানুর রহমান, হাজী আ: রশীদ ও আব্দুল হালিম ভাঙ্গন রোধে দ্রুত একটি কার্যকরী বাঁধ দেয়ার দাবী করেন। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), আলোকিত ভূরুঙ্গামারী ও দুধকুমার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহানারা বেগম মীরা বলেন, ”আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শালজোড় ঘাট ও ঘাটগামী পাকা রাস্তাটি রক্ষায় বাঁশ দিয়ে চারশ ফুট একটি বাঁধ নির্মানের কাজ চলছে । যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এটি নিতান্তই অপ্রতুল। নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে তিলাই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল হক শাহিন শিকদার, চরভূরুঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম ফজলুল হক, শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ইউসুফ ও পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, আমাদের ইউনিয়নের প্লাবিত হওয়া নিম্নাঞ্চলগুলো জেগে উঠলেও নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।ভাঙ্গনের তথ্য আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত পরিদর্শন শেষে নদী শাসনের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত: শিলখুড়ি খেয়া ঘাটের দুইপারের জনগনের পারাপারের সুবিধার্থে ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও কালজানি ও দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন রোধে ”দুধকুমার নদী উন্নয়ন প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প তৈরীর কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরুজুল ইসলাম বলেন, আমি ইতোমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শণ করেছি। বন্যা পরিস্থিতি যেভাবে মোকাবেলা করেছি তেমনি নদী ভাঙ্গন রোধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান দৃশ্যমান হবে।
Leave a Reply