আবুল হোসেন বাবুল, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের টাপু ভেলাকোপায় এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রাম জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি। গ্রামের সিংহভাগ মানুষের দাবী এটি আত্মহত্যা নয় বরং হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। সদর থানা পুলিশ গিয়ে ঘরের ভিতর বিছানায় শোয়ানো অবস্থায় ঐ নারীর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
সরেজমিন গিয়ে এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৮ জুলাই দুপুরে কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার টাপু ভেলাকোপা গ্রামের পার্শ্ববর্তী আত্মীয় আঃ ছালামের স্ত্রী লাভলী বেগম ও কন্যা ছালমা বেগম একটি গরুর চোখে আঘাতের ঘটনায় শাহাদতের স্ত্রী রনজিনা (৩২) কে বিবস্ত্র করে মারপিট করতে থাকে। পরে সংবাদ পেয়ে রনজিনার পিতা রমজান আলী ও আরও কয়েকজন গিয়ে রনজিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। রনজিনা এক সন্তানের জননী ও বর্তমানে ৫ মাসের অন্তস্বত্বা বলে জানা গেছে। মেয়ের পিতা রমজান আলী জানায়, রাত্রে আমার নাতী আমার কাছে আসে এবং ভাত খেয়ে আমার কাছেই থাকতে চায়। আমি তাকে না রেখে তার মায়ের কাছে পৌছে দিতে নিয়ে যাই। মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পর গলায় ওড়না পেছিয়ে ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। রনজিনার মামা নুর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাগ্নিকে রাতের অন্ধকারে একা পেয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার সংবাদ এলাকায় প্রকাশ করে ঘটনাটি ভিন্নদিকে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রনজিনার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দেখতে যাওয়া সিংহভাগ প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কোন ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে যে নমুনাগুলো মৃতের শরীরে সাধারণত থাকে তাহার কিছুই আমরা দেখতে পাইনি, বরং তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন আমরা দেখেছি। সংবাদ পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ রাতেই রনজিনার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য থানায় নিয়ে আসে। ৯ জুলাই সকালে লাশের পোষ্টমটেম সম্পন্ন হয়। রনজিনার স্বামী শাহাদত হোসেন বলেন, সংবাদ পেয়ে আমি ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে আসি। থানায় কোন অভিযোগ কিংবা মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন মামলা এখনও করি নাই তবে করবো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রনজিনাকে মারপিটের পর শ্বাস রোধে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। পোষ্টমটেম রিপোর্ট আসলেই প্রকৃত সত্যটা বেড়িয়ে আসবে যে, এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকান্ড। এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর ছালামের পরিবারের দিকে থাকলেও তারা রয়েছে বহাল তবিয়তে, এখনও গা ঢাকা দেয়নি। মতামত জানতে ছালাম মিয়ার বাড়িতে গিয়ে এক যুবকে পাওয়া যায় সে তথ্য সংগ্রহের কাজে বাধার সৃষ্টি করে, পরে জানা যায় ঐ যুবকের নাম কাইয়ুম। সে ঘটনার পর থেকেই ছালাম মিয়ার আসে পাশে সার্বক্ষনিক রয়েছে। আব্দুস ছালাম জানান, রনজিনার বাবা রমজান আলী আমার ছেলে এবং আরও একজন মিলে ঝুলন্ত লাশটি নামিয়ে বিছানায় নেয় এরপর আমিও সেখানে যাই। অপর একটি সূত্র জানায়, আত্মহত্যার আগে রনজিনা নিজ হাতে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছে। ঐ চিরকুটটিতেও রয়েছে গ্রামবাসীর সন্দেহ। এলাকাবাসী রনজিনার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করছে।
কুড়িগ্রামের টাপুভেলাকোপায় গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ
জনমনে প্রশ্ন হত্যা নাকি আত্মহত্যা!
Leave a Reply